প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন জন্মনিবন্ধন ব্যতিরেকে কি ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি করা যাবে? - অধিদপ্তরের কড়া নির্দেশনা!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন জন্মনিবন্ধন ব্যতিরেকে কি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে - অধিদপ্তরের কড়া নির্দেশনা!


শিক্ষাজীবনের শুরুতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য আজ এই ব্লগ পোস্টটি। আপনারা জানেন, বর্তমানে যেকোনো সরকারি-বেসরকারি কাজে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ একটি অত্যাবশ্যকীয় নথি। আর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব এখন আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার জন্য প্রযোজ্য।

জন্মনিবন্ধন ছাড়া ভর্তি নয়! - অধিদপ্তরের বার্তা:

অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত চিঠিটির মূল বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট: "অনলাইন জন্মনিবন্ধন ব্যতিরেকে কোন ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি না করা প্রসঙ্গে।"

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তির সময় জন্ম নিবন্ধন সনদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করছে না। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিস্টারে প্রদত্ত তথ্যের মধ্যে বড় ধরনের গড়মিল দেখা দিচ্ছে। এই গড়মিল ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে (যেমন পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, সনদপত্র ইত্যাদি) জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

নির্দেশনাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

শিক্ষার্থীর সঠিক বয়স, নাম, পিতা-মাতার নাম ও ঠিকানা নিশ্চিত করার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ অত্যন্ত জরুরি। এটি শিক্ষার্থীর মৌলিক তথ্যের আইনি প্রমাণ। যদি ভর্তির সময় এই তথ্যে গরমিল হয়, তবে:

  • শিক্ষার্থীর পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন (যেমন পিইসি, জেএসসি/জেডিসি) করার সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ভবিষ্যতে যেকোনো সনদপত্র বা অফিসিয়াল নথিতে তথ্যের ভুলভ্রান্তি থেকে যাবে।
  • আইনগতভাবে শিক্ষার্থীর সঠিক পরিচয় যাচাই করা কঠিন হতে পারে।

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি কড়া বার্তা:

অধিদপ্তরের নির্দেশনায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, এখন থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র/ছাত্রীদের ভর্তির সময় অবশ্যই অনলাইন জন্মনিবন্ধনে প্রদত্ত নিম্নোক্ত তথ্যাদি খুব সতর্কতার সাথে যাচাই করতে হবে:

  • শিক্ষার্থীর নাম (বাংল ও ইংরেজি)
  • ✅ শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর
  • জন্ম তারিখ
  • পিতা-মাতার নাম
  • ✅ পিতা-মাতার NID নম্বর
  • ✅ পিতা-মাতর জন্ম তারিখ
  • ✅ পিতার অথবা মাতার NID দিয়ে কেনা মোবাইল নম্বর ও সেই নম্বর ও NID দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলা।
  • ঠিকানা

এই সকল তথ্য জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী শতভাগ সঠিক আছে কিনা, তা নিশ্চিত করেই ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে এই নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অভিভাবকদের করণীয়:

যেহেতু অনলাইন জন্মনিবন্ধন ছাড়া ভর্তি সম্ভব নয়, তাই সকল অভিভাবককে নিম্নলিখিত বিষয়ে সচেতন হতে হবে:

  1. জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করুন: আপনার সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদটি অনলাইন এবং হালনাগাদ করা আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন। হাতে লেখা সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না।
  2. তথ্যের সঠিকতা যাচাই: সনদের সাথে অন্যান্য নথিপত্রের (যেমন পিতা-মাতার এনআইডি) তথ্যের মিল আছে কিনা, তা ভর্তির আগেই যাচাই করে নিন। কোনো ভুল থাকলে দ্রুত সংশোধন করে নিন।
  3. আগে প্রস্তুতি নিন: ভর্তির মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত সকল কাজ সেরে রাখুন, যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো ভোগান্তি না হয়।

শেষ কথা:

শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্বিঘ্ন করতে এবং সকল প্রকার দাপ্তরিক জটিলতা এড়াতে অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। কোনো শিক্ষার্থী যদি সনদ ছাড়া বা ভুল তথ্য নিয়ে ভর্তি হয়, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবক উভয়কেই এর দায় বহন করতে হতে পারে। তাই, সবাই মিলে এই সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে সন্তানের শিক্ষাজীবনের ভিত্তি মজবুত করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন