প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা

প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা


প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত একটি নির্দেশন প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখানে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা

প্রাক প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব সম্পর্কেও এখানে বলা হয়েছে। তাই প্রাক প্রাথমিকের সাথে সম্পর্কিত সকলকেই এই নির্দেশনাটি পড়তে হবে। 

প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা পড়লে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের সাথে জাড়িত সকল কিছু জানা যাবে। সেই সাথে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত আরো বিষয় পোস্টে নিচে দেওয়া হলো যেগুলো পড়লে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সকল কিছুর ধারণা আসবে।

সূচিপত্র

✒️ ভুমিকা

✒️ প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের বৈশিষ্ট্যসমূহ

✒️ বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের ধরন

✒️ প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস,সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনা

  • ❤️ শ্রেণিকক্ষের সাজসজ্জা
  • ❤️ শ্রেণিকক্ষের বিন্যাস
  • ❤️ শ্রেণিকক্ষে আসন ব্যবস্থা
  • ❤️ শ্রেণিকক্ষের পরিস্কার পরিছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ

✒️ প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের নমুনা চিত্র

  • ❤️ চিত্র ১: একটি শ্রেণিকক্ষের মেঝের চিত্র
  • ❤️ চিত্র ২: শিক্ষকের বসার পিছনের দেয়ালের চিত্র
  • ❤️ চিত্র ৩: সাধারণ দেয়াল-১ এর চিত্র
  • ❤️ চিত্র ৪: সাধারণ দেয়াল-২ এর চিত্র
  • ❤️ চিত্র ৫: সাধারণ দেয়াল-৩ এর চিত্র
  • ❤️ চিত্র ৬: একটি পরিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষের চিত্র

✒️ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টজনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা

ভুমিকা

বাংলাদেশে ২০১০-১১ সাল থেকে অন্তবর্তীকালীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্যাকেজের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসমূহ নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে যার যার নিজস্ব শিক্ষাক্রম ও নির্দেশনা অনুসরণে সংগঠিতভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা করে আসছিল। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষার সমন্বিত অংশ হিসেবে গ্রহণের পর সরকার সকল শিশুর জন্য জাতীয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রণয়ন এবং সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও নির্দেশনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। সরকারি, বেসরকারি এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিকঅভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং স্কুল পর্যায়েবাস্তবায়নের জন্য সহায়িকা, নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন মান (PPE Service Delivery Standards) প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন করেছে। ২০১৪ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সকল বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে এই জাতীয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্যাকেজ ব্যবহৃত হবে। প্রণীত শিক্ষাক্রম ও উপকরণসমূহ ব্যবহার করে এবং নির্ধারিত বাস্তবায়ন মান অনুসরণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করলেই কেবলমাত্র কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। মানসম্মত উপকরণ এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে বাস্তবায়নে তার যথাযথ ব্যবহারই মূল চালিকা শক্তি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ও শিক্ষক সহায়িকায় বারবার যে বিষয়সমূহের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে স্কুল/কেন্দ্র পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে যথাযথ পরিবেশ তৈরি এবং অবশ্যকরণীয় কার্যক্রমের মান ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। বিদ্যালয়/কেন্দ্র পর্যায়ে উপরোক্ত নির্দেশনাসমূহের আলোকে যথাযথভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে

মূলত দুইটি বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

  1. শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা
  2. শ্রেণিকক্ষ ও এর বাইরে শিক্ষক ও অন্যান্যদের জন্য নির্ধারিত কাজ

২ নং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সহায়িকায় বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে ১ নং বিষয়টি শিক্ষাক্রমসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টে গুরুত্বসহ আলোচিত হলেও সমন্বিতভাবে কোথাও সংকলিত হয়নি। শিক্ষকসহ বিদ্যালয়/কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সকলে যেন সহজেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় নির্দেশনা একত্রে পেতে পারে সেজন্য একটি সহজবোধ্য নির্দেশিকার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। তাছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকলেও সকল শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা সময় সাপেক্ষ। আবার অন্যদিকে প্রশিক্ষণে আপাতত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদেরই শুধু বিবেচনা করা হচ্ছে কিন্তু শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা কাজে প্রধান শিক্ষকসহ অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য শিক্ষকদের ভুমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এ নির্দেশিকাটি প্রণীত হয়েছে। শিক্ষকসহবিদ্যালয়/কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সকলকে, একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি/কেন্দ্রের----

  • শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্ন্যাস কিরুপ হবে
  • কিভাবে শ্রেণিকক্ষের সাজসজ্জা করতে হবে এবং
  • কিভাবে শ্রেনিকক্ষ ও উপকরণের ব্যবস্থাপনা করতে হবে

এ বিষয়ে সহজবোধ্য ভাবে সম্যক ধারণা ও বাস্তবসম্মত নির্দেশনা দেয়াই এই নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিত (যেমন, সরকারি বিদ্যালয়ে, কমিউনিটিতে, নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষে, অন্য শ্রেণিকক্ষ শেয়ার করে ইত্যাদি) কে বিবেচনায় নিয়ে এই নির্দেশিকাটি প্রণীত হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনার পুর্বে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, শিক্ষক সহায়িকা এবং বাস্তবায়ন মানের আলোকে একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের বৈশিষ্ট্যসমূহ জেনে নেওয়া জরুরী। নি¤েœ সংক্ষিপ্তভাবে তা তুলে ধরা হলো।

একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের বৈশিষ্ঠ্যসমূহ (Characteristics of a Pre-Primary Classroom)

শিশুর শিখন প্রক্রিয়ায় যেসব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেগুলোর একটি হলো শিশুর চারপাশের পরিবেশ। একটি আদর্শ, আনন্দমুখর, শিশুবান্ধব শিখন পরিবেশ শিশুর বিদ্যালয়ে আসার প্রথম আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ শিখনের সুযোগ তৈরি করার অন্যতম শর্ত হল একটি আদর্শ শিশুবান্ধব শ্রেণিকক্ষ। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পরিবেশ ঠিক বাড়ির মত পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিক না হলেও, প্রাথমিক স্তরের অন্যান্য শ্রেণির মত পুরোপুরি আনুষ্ঠানিক হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়। শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ এমনভাবে পরিকল্পনা করা উচিৎ যা শিশুকে যথাযথভাবে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক পরিবেশে ধীরে ধীরে অভিযোজিত হতে সহায়তা করতে পারে। এই পরিবেশ তাই হতে হবে আনন্দময়, আরামদায়ক, সহানুভূতিশীল ও সহায়তামূলক যেখানে শিশু নিরাপদ বোধ করবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন কর্মকাÐে অংশগ্রহণ করতে পারবে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। সার্বিক বিবেচনায় একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের আদর্শ শিখন-শেখানো পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

আয়তন - শ্রেণিকক্ষের আয়তন/পরিসর হতে হবে যথাসম্ভব বড় যাতে শিশুরা বিনা বাধায় ইচ্ছেমত নড়াচড়া ও চলাফেরার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায়। ৩০ জন শিশু নিয়ে ন্যূনতম মান বজায় রেখে শিখন- শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ২৫০ বর্গফুট মাপের একটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন।

মেঝে, দেয়াল, দরজা-জানালা ও ছাদ - প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের মেঝে, দেয়াল, দরজা-জানালা ও ছাদ হতে হবে:

👉 মজবুত, মসৃন ও ঝুকিমুক্ত,

👉 রংগিন কেননা শিশুরা রঙ্গীন পরিবেশই বেশী পছন্দ করে, এবং

👉 দেয়ালে শিখন-শেখানো উপকরণ টাঙ্গানো এবং শিশুদের আঁকা চিত্র ও চারু-কারুর কাজ শিশুদের দৃষ্টিসীমা বরাবর প্রদর্শনের উপযোগী

পর্যাপ্ত আলো, বাতাস এবং অনেক রঙের ব্যবহার - শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলো আসার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বাতাস যেন চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রেণিকক্ষটি কোনভাবেই স্যাঁতস্যাঁতে হবে না কারণ তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। পর্যাপ্ত আলো জায়গাটিকে উষ্ণ রাখে এবং বিভিন্ন জিনিসপত্রকে উজ্জ্বল দেখায়। সবুজ, নীল রঙের ব্যবহার পরিবেশকে শান্ত করে এবং লাল, হলুদ রং কাজ করতে উবদ্ধ করে। শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে বিশুদ্ধ বাতাসের প্রবাহ শিশুর আবেগিক এবং সুস্বাস্থের (ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের বৈশিষ্ঠ্যসমূহ

আসবাবপত্র - প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ যথাসম্ভব খোলা বা উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন যেন শিশুরা বিনা বাধায় চলাফেরার যথেষ্ট জায়গা পায়। এজন্য প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে কম পরিমাণে আসবাবপত্র থাকা বাঞ্ছণীয়। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের বসার জন্য কক্ষের আকৃতি অনুযায়ী একটি মাদুর/চট/প্লাস্টিক ম্যাট বিছানো থাকবে। শিক্ষকের বসার জন্য একটি টুল/মোড়া থাকতে পারে। বিভিন্ন রকম খেলনা উপকরণ, বই, খাতা, কাগজ ইত্যাদি রাখার জন্য ট্রাঙ্ক/বক্স/ব্যাগ/ঝুলন্ত সেলফ/সেলফ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষে চকবোর্ড/ ডিসপে বোর্ড এমন উচ্চতায় স্থাপন করতে হবে যাতে শিশুরা সহজেই এগুলো ব্যবহার করতে পারে। সম্ভব হলে দেয়ালের নীচু অংশ সবুজ রং করে দেয়া যেতে পারে যাতে শিশুরা সেখানে চক দিয়ে ইচ্ছেমত আঁকা-আঁকি করতে পারে।

পানীয় জল, হাত ধোয়ার জায়গা ও শিশুদের ব্যবহার উপযোগী টয়লেট - শিশুদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে জগ ও গাসে পানি পান করার ব্যবস্থা থাকতে পারে। শিশুদের হাত ধোয়ার জন্য বেসিন থাকা বাঞ্ছণীয়। না হলে হাত ধোয়ার বিকল্প ব্যবস্থা থাকতে হবে। একইভাবে টয়লেট যেন শিশুদের ব্যবহার উপযোগী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কাঠামো গত কোন সীমাবদ্ধতা থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

খেলা ও কাজের জন্য খোলা জায়গা - শ্রেণিকক্ষের ভিতর ও বাইরে বিভিন্ন কাজ ও খেলার জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ খোলা জায়গার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সম্ভব হলে শ্রেণিকক্ষের সাথে যেন শিশুদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গার ব্যবস্থা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাইরের খেলা বা কাজের জন্য শিশুরা স্কুলের খেলার মাঠ ব্যবহার করতে পারে তবে এক্ষেত্রে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।

✅ শিশুবান্ধব বসার ব্যবস্থা - প্রাক-প্রাথমিকে শিশুদের বসার ব্যবস্থাপনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের বসার জন্য মেঝেতে মাদুর/ম্যাট থাকাই শ্রেয় যেন আরাম করে বসতে পারে এবং ইচ্ছেমত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। শিশুদের বসার ব্যবস্থা এমনভাবে করতে হবে যাতে প্রতিটি শিশু বিনা বাধায় সবকিছু দেখতে ও করতে পারে। এজন্য বড় দলে কাজ করার সময় শিশুদেরকে ট আকৃতিতে বসানো একটি উত্তম পন্থা।

✅ ইচ্ছেমত খেলা ও সজৃ নশীল কাজ করার কর্না র - প্রা ক-প্রা থমিক শিক্ষায় শিশুদের প্ির তদিনই বিভিন্ œ ধরনের ইচ্ছেমত খেলা ও সজৃ নশীল কাজের সুে যাগ রয়েছে। এই কাজসমহূ সষ্ঠু ভু াবে করার জন্য প্রা ক-প্রা খমিক শিক্ষক্রম অনসু ারে শে্ির ণকক্ষে ৪টি কর্না রের প¯্র াÍ ব করা হয়েছে। কর্না রগুে লা হচ্ছে ১) বই ও আঁ কার কর্না র ২) বকø ও নাড়াচাড়ারকর্না র ৩)কল্পনারকর্না রএবং ৪) বালি ও পানিরকর্না র। প্ির তটি শে্ির ণকক্ষেএই চারটি কনার্ েরর ব্যবস্থা থাকতে হবেএবংতালিকা অনযু ায়ীকনার্র উপকরণসমহূ ওথাকতেহবে।

✅ শিখন উপকরণ - জাতীয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম অনুসারে শিখন-শেখানোর মূল উপকরণসমূহের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া খেলার সামগ্রী হিসেবে যে কর্নার উপকরণের তালিকা শিক্ষক সহায়িকায় দেয়া আছে তা ও পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া কর্নারগুলোকে আরও আকর্ষনীয় করার জন্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহীত খেলনা ও উপকরণ এর সাথে দেয়া যেতে পারে। শিশুদের সার্বিক বিকাশকে বিবেচনায় রেখে কর্নারগুলো সাজানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য যেসব উপকরণ/ জিনিসের (ষ্টেশনারি) প্রয়োজন যেমন - পেন্সিল, রং, খাতা, রঙিন কাগজ, চক, ডাস্টার, কাঁচি, আঠা ইত্যাদি সরবরাহ থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন শিখন-শেখানো সামগ্রী যেগুলো ব্যবহারের পর কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো নিয়মিত পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

০৭

✅ শ্রেণিকক্ষ সজ্জা - শ্রেণিকক্ষে শিখন উপকরণসমূহ যথাযথ স্থানে রাখার পরও এমন অনেক জায়গা থাকে যা শিশুবান্ধব করে সাজালে শিশুরা আনন্দ পায় এবং শ্রেণিকক্ষকে তাদের প্রিয় জায়গা মনে করে। শিশুদের তৈরি ডিজাইন ও শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সুন্দর করে সাজানো যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন শিশুতোষ ছবি, পোষ্টার পেইন্টিং, চার্ট ইত্যাদি দিয়েও কক্ষ সাজানো যেতে পারে। সর্বোপরি বিভিন্ন রঙ্গীন কাগজ কেটে দেয়াল ও ছাদ সাজালে এবং নিয়মিত সাজ পরিবর্তন করলে শ্রেণীকক্ষের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বাড়ে। সঠিক ও সুন্দরভাবে উপকরণ প্রদর্শনও শ্রেণিকক্ষ সাজসজ্জার একটি অংশ।

✅ উপকরণের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা - উপকরণ সংগ্রহ, প্রদর্শন এর সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত উপকরণের ব্যবহার শিশুসহ বড়দেরও কাজে আতœবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। অনেক উপকরণ নাড়াচাড়ার মাধ্যমে শিশু দ্রæত শেখে, পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে পারে এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখে। আর উপকরণ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ শিশুকে উপকরণের গুরুত্ব, গুছিয়ে রাখার গুরুত্ব এবং দায়িত্ববোধের জন্ম দেয়। তারা এগুলোকে নিজের বলে ভাবে ও গর্ববোধ করে।

✅ একটি আকর্ষণীয় শিখন পরিবেশ শিশুদের বিভিন্নভাবে শেখার প্রবণতাকে উৎসাহিত ও সহায়তা করে। তাই শিশু-শিশু, শিশু-শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষক, শিক্ষক-বাবা/মা, শিশু-বাবা/মা ইত্যাদি পারস্পরিক সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশের পাশাপাশি মানবিক পরিবেশকে আকর্ষণীয় এবং ইতিবাচক করতে শিশু, বাবা-মা, শিক্ষকসহ অন্যান্য সকলের অংশগ্রহণ এক্ষেত্রে মূল ভ‚মিকা পালন করতে পারে। এটি পরোক্ষভাবে শিশুকে ক্লাসে মনোযোগী, উৎসাহী, আগ্রহী এবং সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে এবং ক্লাসে তারা খুশি থাকে, আনন্দে থাকে।

✅ নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতা - ছোট শিশুদের শ্রেণিকক্ষ হতে হবে নিরাপদ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। শিশুরা প্রতিদিনই খেলাধুলা বা অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে তা নোংরা করে ফেলতে পারে তবে তা নিয়মিত পরিস্কার রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য যে কোন ক্ষতিকর জিনিস যেমন- চোখা কাঠি, বেড, ভাঙ্গা খেলনা, ভাঙ্গা গাস, কাচের টুকরা ইত্যাদি দেখামাত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে। শিক্ষকই প্রতিদিনের নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। শিশুদেরকেও তাদের উপযোগী বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করানোর মাধ্যমে এই ব্যাপারে সচেতন করবেন।

✅ একীভ‚ততা - প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে সব ধরনের শিশুর কথা বিবেচনায় রেখে একীভ‚ততা নিশ্চিত করতে হবে। সজ্জার উপকরণ, ছবি, পেইন্টিংসহ অবকাঠামোগত বিষয়েও একীভ‚ততা নিশ্চিত করতে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

✅ শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিবীক্ষণ - শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা একটি ধারাবাহিক ও নিয়মিত প্রক্রিয়া। সামগ্রিক বিন্যাস, সজ্জা ও উপকরণ শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য। প্রতিদিন শিশুদের সরব ও সক্রিয় অংশগ্রহণে এর বিন্যস্ততা নষ্ট হবে তবে মনে রাখতে হবে এটাই কাম্য। আবার অন্যদিকে এই সজ্জা ও বিন্যাস স্থায়ী নয়, পরিবর্তনশীল। সুতরাং শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শ্রেণিকক্ষকে সবসময় শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় রাখতে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষের ধরন

শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনার জন্য আরো একটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরী। তা হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য শ্রেনীকক্ষের ধরন। সার্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে সরকার মূলতঃ দুইভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। একটি হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কতকৃর্  সরকারি প্রা থমিক বিদ্যালয় কেন্দিক্র প্রা ক-প্রা থমিক শিক্ষা পদ্র ান আর অন্যটি হলো সরকারি ও বেসরকারি সং¯া’ র মধ্যে সহযোগিতার (GO-NGO collaboration for universal PPE) আওতায় বেসরকারি সং¯া’ ওঅন্যান্য সরকারি প্ির তষ্ঠানকতকৃর্  প্রা ক-প্রা থমিকশিক্ষা পদ্র ান। প্রা থমিকশিক্ষাঅধিদপ্তর,বেসরকারি সং¯া’ ও অন্যান্য সরকারি প্ির তষ্ঠান কতকৃর্  প্রা ক-প্রা থমিক শিক্ষাদানের জন্য যেসব কক্ষ/¯া’ ন/কেন্দ্র ব্যবহার করা হয় সেগুলোর

ধরন নিচে সংক্ষেপে বণর্ন াকরা হলো:

✅ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য বরাদ্দকৃত শ্রেনিকক্ষ ।

✅ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে গুলোতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা শ্রেনিকক্ষ নেই তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত যে কোন শ্রেনিকক্ষ ভাগাভাগি করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা।

✅ কমনিউটিতে ভাড়া করা ঘরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ কেন্দ্রই শুধুমাত্র প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব কেন্দ্র অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

✅ তিনটি পার্বত্য জেলায় পাড়া কেন্দ্রভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ।

✅ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক (মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ।

✅ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের স্থাপনার ভিতর অবস্থিত যে কোন একটি কক্ষ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য ব্যবহার করে।

✅ কিন্ডারগার্টেন ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ। এধরনের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যক্তিমালিকানায় ভাড়া করা ঘরে প্রদান করা হয়।


উপরে উল্লেখিত প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষগুলোকে প্রধানত: দুইটি ধরনে ভাগ করা যায়।

✅ শুধুমাত্র প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য বরাদ্দকৃত শ্রেণিকক্ষ (Exclusive/dedicated classroom for PPE )

✅ অন্য শ্রেণির সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ (shared classroom for PPE)

এখানে উল্লেখ্য যে এই দুই ধরনের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষগুলোতে শিক্ষাদানের জন্য একই রকমের সুযোগসুবিধাদি পাওয়া যাবে না। তাই এই বিষয়টিকে মনে রেখে সরকার কর্তৃক প্রণীত মানসম্মত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচলনার মানদÐের (Quality Pre-Primary Service Delivery Standards) আলোকে নিম্নে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনা বিবৃত হলো।

প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনা :

শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস এবং সজ্জার ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলো মনে রাখতে হবে। তাছাড়া কক্ষের আকার ও অবস্থানের ভিত্তিতে নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সাধারণভাবে যে

বিষয়সমূহ বিবেচনা করে শ্রেণি কক্ষটি বিন্যস্ত করলে শিশুদের জন্য বেশী আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিম্নরুপ;

শ্রেণিকক্ষের সাজসজ্জাঃ

১. শ্রেণিকক্ষের যে দেয়ালে চকবোর্ড থাকবে সে দেয়ালের সজ্জা ও বিন্ন্যাস “শ্রেণিকক্ষের বিন্যাস” নির্দেশনা নং ১ ও ২ মোতাবেক করতে হবে।

২. চকবোর্ড এর দেওয়াল ছাড়া কক্ষের অন্য দেয়ালগুলোর প্রত্যেকটিকে আড়াআড়ি ভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে- নিচের অংশ, মধ্যের অংশ ও উপরিভাগ।

❤️ নীচের দিকের দুই ফুট পর্যন্ত সবুজ রং করে শিশুদের চকবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া যেতে পারে।

❤️ মাঝামাঝির অংশের নিচের দিকে বাংলা বর্ণ, সংখ্যা ও অন্যান্য ছবি (যেমন-ফুল, ফল, মাছ, সবজি, পাতা) বিভিন্ন রঙিন কাগজ কেটে লাগাতে হবে।

❤️ মাঝামাঝি অংশের উপরের দিকে মাসিক/দৈনিক সেশনের সাথে সম্পৃক্ত ছবি চার্ট/ছড়ার চার্ট টানানো যেতে পারে।

❤️ দেওয়ালের উপরিভাগে বর্ণ, সংখ্যা, সংকেত চিহ্ন ইত্যাদির পাশাপাশি ছবি এঁকে অথবা বিভিন্ন শিশুতোষ ছবি, নকশা পেইন্টিং ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে। প্রতিটি অংশে বিভিন্ন রঙিন কাগজ কেটে নকশা করে লাগানো যেতে পারে। উপরের অংশে শিশুতোষ পেইন্টিং করার সময় ছাদ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।

❤️ ছবি, পেইন্টিং লাগানোর ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যেন তা সকল ধরনের শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করে। এক্ষেত্রে একীভূততা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কক্ষটি আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন নকশা, রঙ্গীন কাগজ, ছবি ইত্যাদি ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে।

৪. কক্ষের দরজা জানালাসমূহও রং কিংবা রঙ্গীন কাগজ দিয়ে সাজানো যেতে পারে।

৫. কক্ষের বাইরের দেয়ালকেও সাজানো যেতে পারে। বাইরের যে খোলা জায়গায় বিভিন্ন সময় বাইরের খেলা ও কাজ করানো হবে সে জায়গাটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাখতে হবে। প্রয়োজনে জায়গাটি চিহ্নিত করে রাখা যেতে পারে।

৬. সজ্জার ক্ষেত্রে শিশুদের হাতের কাজ এবং তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

শ্রেণিকক্ষের বিন্যাসঃ

ভাগাভাগি করে শ্রেণিকক্ষ (shared classroom for PPE) ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দেয়ালগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে দড়ি/রশি লাগিয়ে রাখা যেতে পারে। প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস শুরুর পুর্বে বর্ণনামতো

উপকরণসমূহ দড়িতে ঝুলিয়ে লাগানো যেতে পারে যেন কার্যক্রম শেষে খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে দেয়ালের উপরিভাগে স্থায়ীভাবেও লাগানো যেতে পারে।


১. শিক্ষক যেখানে বসবেন তার পেছনে শিশুদের নাগালের মধ্যে চকবোর্ড রাখতে হবে। বোর্ডের রং হবে সবুজ। ইচ্ছেমতো সরানো যায় এরূপ চকবোর্ড ব্যবহার করা যেতে পারে যেন প্রয়োজন অনুযায়ী বোর্ডটি শিশুদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। শ্রেণিকক্ষের দেয়ালের নীচের দুইফুট পর্যন্ত সবুজ রং করে শিশুদেরকে বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতেও দেয়া যেতে পারে।

২. চকবোর্ডের একপাশে সকল শিশুদের নামের তালিকা লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া সাপ্তাহিক রুটিন, মাসিক পাঠ পরিকল্পনা, শিক্ষকের তথ্য এবং বাৎসরিক ক্যালেন্ডারও একই দেয়ালে চকবোর্ডের উভয় পাশে লাগানো যেতে পারে।

৩. শ্রেণিকক্ষের সুবিধামতো চার কোণায় শিক্ষক সহায়িকায় নির্ধারিত চারটি কর্নার স্থাপন করতে হবে। রঙ্গীন কাগজে/ সাদা কাগজে/নকশা কেটে তার মধ্যে কর্নার চারটির নাম লিখে তা নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে ঐ কর্নারের জন্য নির্ধারিত উপকরণসমূহের (শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুযায়ী) নাম লিখে তাও লাগিয়ে রাখা যেতে পারে। প্রতিটি কর্নার শিশুদের উপযোগী করে সংগৃহীত উপকরণ দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে।

৪. আঁকা ও কল্পনার কর্নারের পাশাপাশি শিশুদের আঁকা ছবি এবং তাদের করা চারু ও কারু কাজের প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি রাখা যেতে পারে। সেখানে শিশুদের আঁকা বিভিন্ন ছবি তাদের নামসহ লাগানো থাকবে এবং তাদের বানানো জিনিসপত্র সাজানো থাকবে। তাছাড়া শিশুদের আঁকা ছবি এমনভাবে টাঙানো যায় যাতে প্রতিটি শিশুই তার নিজের আঁকা ছবি সহজে দেখতে পারে। প্রয়োজনে সূতলি/সুতো দিয়ে শ্রেণিকক্ষ জুড়ে শিশুদের ছবি টানানো যেতে পারে। শিশুদের কাজসমূহ সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি শিশুর নামে কাগজের বা প্লাষ্টিকের ব্যাগও রাখা যেতে পারে।

ভাগাভাগি করে শ্রেণিকক্ষ (shared classroom for PPE) ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যেন চকবোর্ডটি শিশুদের নাগালের মধ্যে থাকে। ভাগাভাগি করে শ্রেণিকক্ষ (ংযধৎবফ পষধংংৎড়ড়স ভড়ৎ চচঊ) ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। যদি সংশ্লিষ্ট জায়গাসমূহ আগে থেকেই ভরা থাকে সেক্ষেত্রে বর্ণিত তথ্যসমূহ ক্যালেন্ডারের মতো ঝুলানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে যা শুধু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি পরিচালনার সময় লাগাতে হবে।

ভাগাভাগি করে শ্রেণিকক্ষ (shared classroom for PPE) ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কর্নার এর পরিবর্তে কিছু সহায়ক বাক্স বা সহায়ক ব্যাগ ব্যবহার করেও এই উদ্দেশ্য সাধন করা যায়। এটা হল কর্নারগুলোর মত একই উপকরণ ভর্তি একেকটি ব্যাগ। শিশুরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী এগুলো দিয়ে খেলে আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে পারে। শিক্ষক এই ব্যাগগুলো দিয়ে কর্নার একটিভিটি করাতে পারেন।

ভাগাভাগি করে শ্রেণিকক্ষ (shared classroom for PPE) ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও এ থাকবে তবে এমন ভাবে করতে হবে যেন তা খুলে নিয়ে রাখা যায় এবং শ্রেণি পরিচালনার সময় আবার লাগানো যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী ভাবেও লাগিয়ে রাখা যেতে পারে।

৫. স্থানীয় ভাবে সংগৃহীত উপকরণসমূহ শিশুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর সংগ্রহ ও প্রদর্শন যেমন নিয়মিত ভাবে করতে হবে তেমনি এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।

৬. শিশুদের সকল শিক্ষা উপকরণ, গল্পের বই, অনুশীলন খাতা, রেজিস্টার খাতা, হাজিরা খাতাসহ বিভিন্ন খেলনা, ষ্টেশনারি ও অন্যান্য নথিপত্র রাখার জন্য একটি ট্রাঙ্ক/বক্স/ব্যাগ/ঝুলন্ত সেলফ/সেলফ শ্রেণিকক্ষের কোণে রাখা যেতে পারে।

বিন্যাস ও সজ্জার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা তাদের নিজের ইচ্ছেমতো এবং শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে খেলা ও বিভিন্ন কাজ করার কারণে প্রতিনিয়তই বিন্যাস ও সজ্জা নষ্ট হবে। তবে কোন ভাবেই এক্ষেত্রে শিশুদের বাঁধা দেয়া যাবে না। কারণ শিশুর আনন্দদায়ক অংশগ্রহণের জন্যই সমস্ত আয়োজন। প্রতিদিন কার্যক্রম শেষে যথাযথ ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজেও শিশুদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরী।

শ্রেণিকক্ষে আসন ব্যবস্থা

১. শিশুদের বসার জন্য মাদুর/চট/পাস্টিকের ম্যাট থাকবে এবং তা রঙ্গীন হলে ভাল হয়।

২. কক্ষে শিশুরা ইংরেজী "U" আকৃতির সেইপে/আকারে বসবে। শীতকালের জন্য প্রত্যেক শিশুদের জন্য স্থানীয়ভাবে কাপড়ের তৈরি ছোট ছোট আসন/তোষক (প্রতিটি শিশুর জন্য একটি করে) তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। যদি শ্রেণিকক্ষটি প্রাক-প্রাথমিক ছাড়া অন্য কোন শ্রেণির কাজে ব্যবহার করা হয় তবে তাদের ব্যবহার্য বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি এমনভাবে সাজাতে হবে যেন শ্রেণি কক্ষের ভিতরে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিশুদের কাজ

করার জন্য পর্যাপ্ত খোলা বা উন্মুক্ত জায়গা থাকে। এজন্য বেঞ্চগুলোকে শ্রেণি কক্ষের দেয়াল ঘেষে বা ইউআকৃতিতে সাজিয়ে রাখলে কক্ষের মাঝখানের জায়গাটিতে মাদুর বিছিয়ে প্রাক-প্রাথমিকের শিশুরা সহজে ব্যবহার করতে পারবে। তবে মনে রাখতে হবে যে বেঞ্চে বসিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

৩. শিক্ষকের বসার স্থানটি শ্রেণিকক্ষে ঢোকার দরজার কাছাকাছি থাকবে। বসার জন্য ছোট টুল/মোড়া থাকতে পারে। গল্প বলা কিংবা বসে শিশুদের সঙ্গে কাজ করার সময় শিক্ষক টুল বা মোড়ায় বসলে সকলে তা দেখতে ও শুনতে পারে।

ভাগাভাগি করে শ্রেণীকক্ষ (shared classroom for PPE) ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ট্রাংক, বক্স বা সেলফ তালাবন্ধ করে কিংবা অন্য কোন বড় আলমারিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এসকল শ্রেণিকক্ষে সাধারণত শিক্ষকের জন্য চেয়ার থাকে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক কখনো সে চেয়ার ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে মাদুরে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

শ্রেণিকক্ষের পরিস্কার পরিছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ

  • শ্রেণিকক্ষের এক কোণায় নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে শ্রেণিকক্ষের বাইরেও এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • শ্রেণিকক্ষের ভিতরে ময়লা ফেলার জন্য একটা বিন/পাত্র থাকতে হবে।
  • শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিশুদের স্যান্ডেল/জুতা রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিশুদের সাবানসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে কক্ষ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা একটি ধারাবাহিক ও নিয়মিত কাজ। কাজটি যেমন নিয়মিতভাবে করতে হবে তেমনি নির্দিষ্ট সময় পর পর সজ্জাতে পরিবর্তন আনতে হবে। বছরে কমপক্ষে তিন বার পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়।

উপরিউল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি শিক্ষক তার নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে আরও সুন্দর ও ফলপ্রসূ ভাবে কক্ষটি সাজাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ব্যবহৃত ছবি, ছড়া, নকশা যেন শিশুদের কাছে বোধগম্য ও আনন্দদায়ক হয়। এমন কোন ছবি, ছড়া বা নকশা ব্যবহার করা যাবে না যা শিশুদের বয়স ও বিকাশ উপযোগী নয়, যা শিক্ষার্থীর মনোকষ্টের কারণ হয় বা শিক্ষার্থী নিজেকে অবহেলিত মনে করে। শিক্ষকের সহায়তার জন্য

১৪ থেকে ১৯ পৃষ্ঠায় একটি সজ্জিত শ্রেণিকক্ষের নমুনা চিত্র দেয়া হলো: দেখুন



প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা এবং ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টজনদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক:

👉 শ্রেণিকক্ষ সজ্জা, বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব শিক্ষকের। 

👉 শিক্ষক শিশুদের সম্পৃক্ত করে এ কাজ করবেন।

👉 স্থানীয় ভাবে বিনামূল্যে সংগ্রহীত রঙ্গিন কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সজ্জিত করা যেতে পারে।

👉 শিক্ষক প্রতিবছর কমপক্ষে তিনবার শ্রেণিকক্ষ সজ্জা ও বিন্যাস পরিবর্তন করে নতুনত্ব আনবেন।

👉 শিক্ষক শ্রেণিকক্ষ সজ্জায় অভিভাবকদের সম্পৃক্ততার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

👉 স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সদস্যদের শ্রেণিকক্ষ সজ্জার কাজে সম্পৃক্ত করবেন।

প্রধান শিক্ষক:

👉 প্রধান শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের সজ্জায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষককে সর্বোত সহায়তা করবেন।

👉 প্রয়োজনে ‍SLIP বা অন্যান্য Source থেকে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।

👉 নিয়মিত মনিটরিং করবেন।

শিশুদের অভিভাবক:

👉 শ্রেণিকক্ষ সজ্জায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে বা স্থানীয় উপকরণ দিয়ে সহায়তা করবেন।

👉 শিক্ষককে সহায়তা করবেন।

👉 নিয়মিত মনিটরিং করবেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (UEO/AUEO)):

👉 নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ সজ্জা, বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন।

👉 নিয়মিত মনিটরিং এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করবেন।

👉 প্রয়োজনীয় সহায়তা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন।

👉 ভালো উদাহরণসমূহ সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং সে অনুয়ায়ী অন্যদের করতে উৎসাহিত

করবেন।

👉 মডেল শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে সকলকে দেখানোর এবং হাতে কলমে শেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

👉 প্রশিক্ষণে নিয়মিত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করবেন।

প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ ও উপকরণ বিন্যাস, সজ্জা ও ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা PDF DOWNLOAD


 
আরো পড়ুনঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন